শেষমেষ মাথানত করতে হল পাকিস্তানি উগ্র ইসলামপন্থীকে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপে ইসলামপন্থী একটি দলের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে বাধ্য হলো পাকিস্তান সরকার। সরকারি নির্দেশে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খাইবার পাখতুনখোওয়ায় মন্দির ভাঙ্গার ঘটনায় ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ইতিমধ্যে। ধৃতরা সকলেই ওই মৌলবাদী সংগঠনের সদস্য। পুলিশ সূত্রে খবর, এফআইআর এ নাম রয়েছে কমপক্ষে ৩৫০ জনের। হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের আশ্বস্ত করে প্রাদেশিক সরকারের ঘোষণা করে, সরকারি অর্থেই ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করা হবে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এই মর্মে নির্দেশে পৌঁছে গিয়েছে। অভিযুক্তদের যাতে বিচারের আওতায় আনা যায়, তাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

তবে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই কয়েক দশকের পুরনো একটি হিন্দু মন্দিরের সংস্কার কাজ চলছিল খাইবার পাখতুনখোওয়ার করাক জেলার টেরি গ্রামে। অভিযোগ,স্থানীয় এক মৌলভীর নেতৃত্বে জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম পার্টি কয়েকশো সদস্য বুধবার সেখানে হানা দেয়। পুরনো মন্দিরের পাশে যে নতুন মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছিল সেটিকে ঘুরিয়ে জ্বালিয়ে দেয় উন্মত্ত উগ্রবাদী মুসলিম জনতা। সরকারি অনুমতি নিয়ে যে মন্দিরটি নয় রূপ দেওয়া হচ্ছে, উন্মত্ত জনতা তা শুনতে চাইনি। অভিযোগ উলামায়ে ইসলাম পার্টির প্ররোচনাতেই গোটা ঘটনা ঘটেছে। তারাই এই লোকজনকে ধর্মের নামে উসকে ক্ষেপিয়ে তোলা। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে এলাকায় ওই সংগঠনের একটি জমায়েত থেকে প্রয়োজনে দেওয়া হয় বলে থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। যদিও জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম পার্টি তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলে, তারা কখনোই এ ধরনের জঘন্য কাজে প্ররোচনা দেয় না। মন্দির ভাঙ্গার ঘটনায় তাদের কোনো হাত নেই।


তবে মন্দির ভাঙ্গার ভিডিও সোশ্যাল মাধ্যমে ভাইরাল হলে, মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হয়ে ওঠে। অভিযুক্তদের অভিলম্বের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলা হয়।পাকিস্তানের মানবাধিকার মন্ত্রী ও ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রাদেশিক সরকারকে নির্দেশ দেন। আর তারপরই শুরু হয় ধরপাকড়।



লোকাল পুলিশের দাবি অনুযায়ী, রাতভর অভিযানে ৩০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ‌।জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম পার্টির নেতা রেহমত সালাম খট্টকও  আছেন। প্রাদেশিক পুলিশের প্রধান কেপিকে সানাউল্লাহ আব্বাসী জানান, এফআইআর-এ ৩৫০ জনের নাম রয়েছে। তিনি জানান অভিযুক্তের বিরুদ্ধে FIR সংশ্লিষ্ট ধারা ছাড়াও সম্পর্কিত আইন মামলা রুজু হয়েছে। তিনি জানান ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃতি ঠেকাতে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থানগুলিতে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।



অপরদিকে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট মন্দিরে হামলার ঘটনাকে নিন্দা করে খাইবার পাখতুনখোওয়ার স্থানীয় প্রশাসনকে বৃহস্পতিবার সমন পাঠিয়েছে। ৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে হাজিরা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।তার আগে হিন্দু কাউন্সিলের প্রধান সাংসদ রমেশ কুমার ও ভাঙ্কওয়ানিকে করাচিতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদ। তার সঙ্গে কথা বলে একটি কমিশন গঠন করা হয়। ঘটনাস্থল ঘুরে ৪ঠা জানুয়ারির মধ্যে কমিশনের রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।




কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত জানান।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন